Howrah brize(হাওড়া ব্রিজ) length and history in bengali

Howrah brize total length and : বাংলা ভাষায় হাওড়া ব্রিজের ইতিহাস ; Howrah brize history

ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের আমলে তৈরি বহিবহু ঝুলন্ত সেতুর নাম রবীন্দ্র সেতু( নতুন হাওড়া ব্রিজ)। এটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা এবং হাওড়া জেলার মধ্যে সংযোগকারী সেতু।

ব্রিটিশ আমলে হাওড়া ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৪৫ সালে পুরনো সেতুটির বদলে নতুন সেতু উদ্বোধন হয়। ১৯৬৫ সালে 14 জুন হাওড়া ব্রিজ নাম পরিবর্তন করে বাঙালী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে রবীন্দ্র সেতু নামে নামকরণ করা হয়।যিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় ও এশিয়ার নোবেল বিজয়ী। 

   এই সেতুটির উপর দিয়ে আসি থেকে এক লক্ষ যানবাহন এবং প্রায় 10 লক্ষ পথচারী চলাচল করে।

হাওড়া ব্রিজ

howrah brize length | হাওড়া ব্রিজ দৈর্ঘ্য প্রস্থ

  • মোট দৈর্ঘ্য – 705 মিটার (2313 ফুট)
  • মোট প্রস্থ – 21.6 মিটার (71 ফুট) দুপাশে 4.6 মিটার (15 ফুট) দুটি ফুটপাত সহ।
  • উচ্চতা – 82 মিটার (269 ফুট)
  • উপরে ফাঁকা – 5.8 মিটার (19 ফুট)
  • নদী থেকে ব্রিজের দূরত্ব – 8.8 মিটার (28.9 ফুট)

howrah brize history l হাওড়া ব্রিজের ইতিহাস

১৮৫৫ সালে হুগলি নদীর দু’পাশে জাঁকিয়ে বসেছে ইংরেজদের ব্যবসা বাণিজ্যের কারবার। নতুন নতুন কলকারখানা গড়ে উঠেছে ব্যবসার খাতিরে নদীর দুই পাড়ে দুই যমজ শহর হাওড়া ও কলকাতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য একটি সেতু বানানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ব্রিটিশ সরকার। ঠিক হয়েছে তো নির্মাণের সব রকম দায়িত্ব সরাসরি সরকারের হাতে থাকবে না তাই তৈরি করা হয় কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট নামে সংস্থা।

 এই সংস্থার অধীনেই 1870 সালে ইঞ্জিনিয়ার 1528 ফুট লম্বা ও 62ফুট চওড়া পন্টুন ব্রিজ তৈরি শুরু হয়। কিন্তু এই বছর প্রচন্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই পন্টুন ব্রিজ বেশ অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া এই ভাসমান সেতুর সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় জাহাজ ও স্টিমার যাতায়াতের, কারণ জাহাজ অস্টিমার গেলে পন্টুন ব্রিজ মাঝখান দিয়ে খুলে দেওয়া হতো। ফলে সৃষ্টি হতে লাগলো প্রচন্ড যানজটের। এইসব কারণে নতুন ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে ব্রিটিশ সরকার।

1906 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেলওয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার পিএস হাইড ইঞ্জিনিয়ার জজ কর্ট ও কলকাতা কর্পোরেশনের চীফ ইঞ্জিনিয়ার wp ম্যাকেলের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। তখনকার অবস্থা সুবিধা এবং প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করে প্রথমেই কমিটি নদীর উপর ভাসমান সেতুর বদলে একটি ক্যান্টিলিভার ব্রিজ তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বলা যায় রবীন্দ্র সেতু বা হাওড়া ব্রিজ তৈরির মূল সূচনা এখান থেকেই শুরু হয়। যদিও বাধা-বিপত্তিও কম ছিল না। সে সময় গোটা বিশ্বে ক্যান্টিলিভার ব্রিজের সংখ্যা ছিল মাত্র তিনটি যার মধ্যে ক্যান্টিলিভার প্রযুক্তিতে তৈরি কানাডার কেমিক সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় লেশলি সাহেব সহ অনেক ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যান্টিলিভার সেতুর তৈরিতে মত ছিল না। তাছাড়া বন্ধুরে গাড়ি চলাচল থেকে জাহাজ চলা চলছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাই ক্যান্টিলিভার সেতুর থেকে ভাসমান সেতুর পাল্লা বেশ ভারী ছিল তাই হাওড়া ব্রিজ তৈরির থমকে যায়।

ইতিমধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চালু হয়ে যায়। যুদ্ধের কবলে পড়ে এদেশে আমদানি কম হওয়ার ফলে কিছুটা অর্থনীতির উপর চাপ পড়ে যায় তাই নতুন কোন ব্রিটিশ প্রশাসন নজর দিল না। বেশ কয়েক বছর পর আবার হাওড়া ব্রিজ তৈরির জন্য কথা উঠতে থাকে। ব্রিটিশ প্রশাসন তখন মার্টিন কোম্পানির মালিক রাজেন্দ্র নাথ মুখার্জিকে নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান ক্লিমেট হিন্ডেল, চিফ ইঞ্জিনিয়ারের যে মেগ্লাসন এবং বিশিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার বেসিল মট। স্যার বেসিল মট প্রথম সিঙ্গেল বেশ ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব দেন।

1922 সালে আর এন মুখার্জি কমিটি চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে যাতে মূলত ক্যান্টিলিভার সেতু তৈরির সুপারিশ করা হয়। ঠিক হয় এমন একটি সেতু তৈরি করা হবে, যাতে অতি সহজে জাহাজ ও স্টিমার চলাচল করতে পারে।

১৯২৬ সালে the new Howrah bridge act পাস হয়। 1930সালে 15 ই মার্চ ব্রিটিশ সরকার হাওড়া ব্রিজ তৈরির জন্য অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। সেই মতো 1936 সালে 705 মিটার দীর্ঘ হাওড়া ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হয়। সেই বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম ক্যান্টি সেতুর নকশা তৈরি করেছিলেন রেন্ডেল পমার ও ট্রিটন।

ব্রেথ ওয়ে বার্ন এবং জোসেফ কন্সট্রাকশন কোম্পানির তত্ত্বাবধানে 25 মিলিয়ন অর্থ বিনিয়োগে 26 হাজার 500 টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছিল। যার মধ্যে 23 হাজার টন হাই স্টীল ছিল টাটা কোম্পানির। কোন নাট বল্টু ছাড়াই এর রিবেটিং এর মাধ্যমে তৈরি হয় হাওড়া ব্রিজ।

এই ব্রিজের উপর দিয়ে বর্তমানে প্রায় তিন লক্ষ গাড়ি ও প্রায় সাড়ে চার লক্ষ পদযাত্রীর পা পড়ে। 1965 সালে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে হাওড়া ব্রিজের নতুন নামকরণ করা হয় যা রবীন্দ্র সেতু নামে পরিচিত। The gateway to Kolkata নামে পরিচিত হাওড়া ব্রিজ।

1943সালে ফেব্রুয়ারি মাসে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। যার প্রথম জান ছিল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম। দেশে-বিদেশে হাওড়া ব্রিজের খ্যাতি এমন যে কলকাতায় আসলে এই হাওড়া ব্রিজ দর্শন না করে কেউ যায় না। বর্তমানে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট এর তত্ত্বাবধানে থাকা রবীন্দ্র সেতু এভাবেই যুগ যুগ ধরে অসংখ্য মানুষের যাত্রা সাক্ষী হয়ে রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.