প্রায় 5000 বছরের ইতিহাস সঙ্গে আনা বর্তমানে ভগ্নপ্রায় তমলুক রাজবাড়ী। এক ভগ্নপ্রায় রা তমলুক রাজবাড়ী এটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তমলুকে অবস্থিত।এই তমলুক রাজবাড়ী সম্রাট অশোক থেকে শুরু করে বৃটিশ আমল ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এই তমলুক রাজবাড়ী সঙ্গে জড়িয়ে আছে।এই রাজবাড়ির উল্লেখ মহাভারতেও পাওয়া যায়।
এই তমলুক এর প্রাচীন নাম তাম্রলিপ্ত ছিল।
Tamluk rajbari history( ইতিহাস ) in bengali
তখনকার রূপনারায়ন নদীর তীরে অবস্থিত তাম্রলিপ্ত বন্দর তার কিছু দূরেই ছিল তমলুক রাজবাড়ী। এই রাজবাড়িটি ময়ূর বংশীয় অধীনে ছিল। ময়ূর বংশ প্রায় পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস ধরে রেখেছে। এমনকি মহাভারতের পৌরাণিক কাহিনীতে এই রাজবাড়িটি উল্লেখ পাওয়া যায়। ধ্রুপদী স্বয়ংবর সভায় তাম্রলিপ্ত রাজকুমার আমরুধয উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিক সূত্র মতে গ্রিসের একজন কারিগর আনা হয়েছিল এই প্রাসাদ নির্মাণের জন্য। তারা ইউরোপীয় স্থাপত্যের আদলে রাজপ্রাসাদ তৈরির পরিকল্পনা করেন। খোলা প্রাসাদ সামনে প্রশস্ত জায়গা। এই আদলে কাজ শুরু হয়েছিল একটি মূল স্তম্ভের উপর রাজবাড়িটি অবস্থিত। তবে এই বেশিরভাগ এখন নেই এখানে দুদিকে দিয়ে চলে গেছে সারি সারি ঘর। খিলান দেওয়া ঘরগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে। শোনা যায় তাম্রলিপ্ত ময়ূর রাজা লক্ষীনারায়ন রায় 1837 সালে রাজবাড়ী তৈরি করার কাজ শুরু করেন। প্রায় দু লক্ষ টাকা দিয়ে এই রাজবাড়ী নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। দোতলা রাজবাড়ীর কাজ এগিয়ে ছিল বেশ অনেকটাই কিন্তু রাজ রাজা লক্ষীনারায়ন হঠাৎই খাজনা সংক্রান্ত বিবাদে ব্রিটিশদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
ব্রিটিশরা সে সময় নিজেদের ইচ্ছেমতো আইন প্রণয়ন করতো ভারত শাসনের জন্য। সেই সময় এমনই আইন ছিল সূর্যাস্ত আইন নিয়ম অনুযায়ী দেশীয় রাজা নির্দিষ্ট দিনে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে খাজনা জমা দিতে হতো। সঠিক সময় খাজনা দিতে না পারলে রাজার সম্পত্তির উপর দখল নেওয়া হতো। সেই সময় এই তমলুক রাজবাড়ী খাজনা মেদনীপুর শহরে জমা দিতে হতো। কিন্তু সে সময় রাস্তা নিরাপদ ছিল না। পথে ছিল ডাকাতের ভয় রাজা লক্ষীনারায়ন সেনারা রাজস্ব নিয়ে নদী এবং স্থলপথে মেদিনীপুরের দিকে রওনা দিত। ব্রিটিশ শাসকরা কৌশলে এই রাজস্ব লুট করে নিয়ে যেত। ফলে রাজস্ব জমা দিতে না পারায় রাজ পরিবারের একটা বড় অংকের সম্পত্তি নিলাম হয়ে যেত। আর এরপর থেকে ব্রিটিশদের সঙ্গে সংঘাত বাড়তে থাকে রাজপরিবারের। স্বাধীনতা সংগ্রামী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই রাজপরিবারের। ময়ূর বংশের 62 তম রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণ এবং তার পুত্র ধীরেন্দ্র নারায়ণের নাতি কুমার ইন্দ্রনারায়ন স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
1930 সালে লবণ সত্যাগ্রহের সময় রাজপরিবারের এক বড় ভূমিকা ছিল। নরঘাট এ লবণ আইন ভঙ্গের জন্য বিশাল মিছিল রাজবাড়ী থেকে রওনা হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন এই রাজবাড়ীর সদস্য ধীরেন্দ্র নারায়ন।
1938 সালে 11 ই এপ্রিল সুভাষচন্দ্র বসু তমলুকে আসেন। প্রথমে সভাস্থল ছিল রাখাল মেমোরিয়াল ময়দান। কিন্তু ব্রিটিশ শাসকদের চাপে মালিকপক্ষ ময়দানে সভা নিষিদ্ধ করেন। তখন কংগ্রেস নেতারা দেখা করেন রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণের সঙ্গে এবং রাজার তত্ত্বাবধানে রাজ বাড়ির সামনে থাকা ময়দানে নেতাজি সভা করেন
Tamralipti port history( ইতিহাস ) in bengali
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে বর্তমানে ঝাড়খন্ডে সিংভূম এলাকায় তামার খনি খুঁজে পাওয়া যায়। সেকালে তামা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাতু ছিল। এই তামা শুধু ভারতীয় ব্যবহার করা হতো না দেশ বিদেশে রপ্তানি করা হতো। দক্ষিনে বঙ্গব সাগরে কাছে রূপনারায়ন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল এক বিশাল বন্দর। যেহেতু বিপুল পরিমাণে তামা এই বন্দর থেকে রপ্তানি করা হতো তাই এই জায়গাটি তাম্রলিপ্ত বন্দর নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক সূত্র মতে 300 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 400 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে রমরমিয়ে বাণিজ্য চলে। ধীরে ধীরে তামার পাশাপাশি রেশম মসলা নীল এইসব বাণিজ্য শুরু হয়। ভারতে 322 খ্রিস্টাব্দ থেকে মৌর্য বংশের শাসন শুরু হয়। মৌর্য বংশের সাম্রাজ্য ছিল পাটলিপুত্র। কিন্তু রাজধানীর কাছে তেমন ভালো বন্দর ছিলনা কারণ সে সময় তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল কলিঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত ফলে বাণিজ্যিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল মৌর্য বংশ। ঐতিহাসিক সূত্রমতে সম্রাট অশোক যখন সিংহাসনে বসেন তিনি তাম্রলিপ্ত বন্দরটি মৌর্য বংশের অধীনে আনার জন্য কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। কিন্তু কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে সম্রাট অশোক হিংসা ছেড়ে অহিংসা ধর্ম নেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। এর পর থেকে তাম্রলিপ্ত বন্দর বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে ব্যাপকভাবে বিবৃত হয়। অশোক তার ছেলে মহেন্দ্র এবং মেয়ে সংঘমিত্র কে সিংহল অর্থাৎ বর্তমানে শ্রীলংকায় পাঠায়। এছাড়া সুবর্ণভূমি যা থাইল্যান্ড নামে পরিচিত চীনি, জাভা ,বিভিন্ন দেশে দূত পাঠান ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে। সে সময় বহু ধর্ম ধর্মীয় এই বন্ধের পথে ভারতে আসতেন বট গাছের বীজ নিয়ে যেতেন। যে বটগাছের নিচে সাধনা করে গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। রূপনারায়ণ নদীতে ধীরে ধীরে চর পড়ে যায় জাহাজের আনাগোনা কমে যায় ফলে এই বন্দর আজ ইতিহাস হয়ে রয়ে যায়।